Type Here to Get Search Results !

তেজস্ক্রিয়তা : Radioactivity বিজ্ঞানের এক অনন্য আবিষ্কার

তেজস্ক্রিয়তা : Radioactivity  বিজ্ঞানের এক অনন্য আবিষ্কার


Radioactivity
Radioactivity :তেজস্ক্রিয়তা

 Study Take ✍ 
 নমস্কার বন্ধুরা 🙏
স্বাগতম স্টাডিটেক ব্লগের আজকের বিশেষ পোস্টে ! আজ আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলো তেজস্ক্রিয়তা। তেজস্ক্রিয়তা বিজ্ঞানের এমন একটি আবিষ্কার, যা চিকিৎসা, শক্তি উৎপাদন, এবং গবেষণার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই পোস্টে আমরা তেজস্ক্রিয়তার ধরন, বৈশিষ্ট্য, এবং মাদাম কুরির অসামান্য অবদানসহ প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করব। এই পোস্টটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি পরীক্ষার জন্য যেমন:
  • রেলওয়ে এনটিপিসি
  • রেলওয়ে গ্রুপ ডি
  • পি এস সি
  • WBCS
  • এসএসসি
  • সিজিএল
  • এমটিএস
  • ক্লার্কশিপ

 তোমরা  মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড় এবং প্রশ্নোত্তর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো তোমাদের খাতায় তুলে রাখ। তাহলে চল শুরু করি । 

 তেজস্ক্রিয়তা : Radioactivity: একটি পরিচিতি

তেজস্ক্রিয়তা এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে শক্তি ও কণার বিকিরণ ঘটে।  এটি প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিমভাবে হতে পারে। ১৮৯৬ সালে অঁরি বেকেরেল প্রথম তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেন। এরপরে মাদাম কুরি এবং পিয়ের কুরি এই গবেষণাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেন।

যখন একটি  পদার্থের নিউক্লিয়াস (আধানকেন্দ্র) স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙে যায় এবং  এবং দুটি অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয় এবং শক্তিশালী বিকিরণ নির্গত করে  তখন একে নিউক্লিয় বিভাজন (Nuclear fission)  বলে । পারমাণবিক বোমা (Atom bomb) এই নিউক্লিয় বিভাজনের নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। 

যখন দুটি নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে একটি নিউক্লিয়াস গঠন করে তখন তাকে নিউক্লিয় সংযোজন (Nuclear fusionবলে, সূর্যের শক্তির উৎস হল এই নিউক্লিয় সংযোজন । সূর্যের মধ্যে দুটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয় সংযুক্ত হয়ে গঠিত হয় একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস ।  হাইড্রোজেন বোমা এ নিউক্লিয় সংযোজনের নীতির উপর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে ।

তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণের ধরণ :

তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ তিনভাবে হয়:

আলফা বিকিরণ (Alpha Radiation)

  • এটি একটি ধীর গতির এবং ভারী বিকিরণ, যা হিলিয়াম নিউক্লিয়াস (He²⁺) নিয়ে গঠিত।
  • আলফা কণাগুলি খুব বেশি দূরত্বে ভ্রমণ করতে পারে না এবং কাগজের পাতায়ও আটকে যায়।
  • উদাহরণ: ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর ক্ষয়।

বিটা বিকিরণ (Beta Radiation)

  • বিটা কণাগুলি ইলেকট্রন (β⁻) বা পজিট্রন (β⁺) দ্বারা গঠিত।
  • এটি আলফার তুলনায় দ্রুত এবং শক্তিশালী। পাতলা ধাতব শীট দিয়ে এটি আটকে রাখা যায়।
  • উদাহরণ: কার্বন-১৪ এর ক্ষয়।

গামা বিকিরণ (Gamma Radiation)

  • এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ এবং সবচেয়ে শক্তিশালী।
  • এটি লেডের মোটা স্তর দিয়েও পুরোপুরি বন্ধ করা কঠিন।
  • উদাহরণ: কোবাল্ট-৬০।

তেজস্ক্রিয়তার ধরণ: 

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা (Natural Radioactivity)

  • এটি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে।
  • কিছু ভারী উপাদান যেমন ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম এবং রেডিয়াম স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিকিরণ নির্গত করে।
  • এটি সূর্যের বিকিরণ, মহাজাগতিক রশ্মি এবং পৃথিবীর অভ্যন্তরের তেজস্ক্রিয় উপাদান থেকে আসে।
  • উদাহরণ: ইউরেনিয়াম-২৩৮।

কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা (Artificial Radioactivity)

  • বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে এটি তৈরি করেন।
  • এটি একটি স্থিতিশীল নিউক্লিয়াসকে বিকিরণ নির্গত করার জন্য উত্তেজিত করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।
  • আবিষ্কারক: আইরিন কুরি এবং ফ্রেডেরিক জোলিও কুরি।
  • উদাহরণ: কার্বন-১১।
প্রবর্তিত তেজস্ক্রিয়তা (Induced Radioactivity)
    • এটি নিউট্রন বা অন্য কণার দ্বারা স্থিতিশীল নিউক্লিয়াসকে উত্তেজিত করে তৈরি হয়।
    • পারমাণবিক চুল্লি বা তেজস্ক্রিয়তা নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
    • উদাহরণ: সিলিকন-৩০।

তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার

তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিসীম।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে: ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি।
শিল্পক্ষেত্রে: ত্রুটি সনাক্তকরণে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
কার্বন ডেটিং: পুরাতাত্ত্বিক নমুনার বয়স নির্ধারণে।

তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতিকর প্রভাব

তেজস্ক্রিয় বিকিরণ অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের মধ্যে রয়েছে:

  • মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা।
  • ডিএনএ মিউটেশন।
  • পরিবেশ দূষণ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি।

তেজস্ক্রিয়তার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক:

১৮৯৬ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী অঁরি বেকেরেল তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কার করেন।

তেজস্ক্রিয়তার একক:

বেকেরেল (Bq): এক সেকেন্ডে এক বিকিরণ।
কিউরি (Ci): ৩.৭ × ১০¹⁰ বিকিরণ প্রতি সেকেন্ড।
সিভার্ট (Sv): বিকিরণের জৈব প্রভাব পরিমাপের একক।

গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
ইউরেনিয়াম-২৩৮ এবং থোরিয়াম-২৩২: প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার উৎস।
রেডিয়াম-২২৬: চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত।
আইসোটোপ: কার্বন-১৪ (কার্বন ডেটিং), আয়োডিন-১৩১ (ক্যান্সারের চিকিৎসা)।

A . তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক কে?
উত্তর: অঁরি বেকেরেল।
B. আলফা, বিটা, এবং গামা রশ্মির মধ্যে কোনটি সবচেয়ে শক্তিশালী?
উত্তর: গামা রশ্মি।
C. কার্বন ডেটিং প্রক্রিয়ায় কোন আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়?

উত্তর: কার্বন-১৪।


মাদাম কুরি: তেজস্ক্রিয়তার অগ্রদূত

রেডিয়াম এবং পোলোনিয়ামের আবিষ্কার

মাদাম কুরি ১৮৯৮ সালে পিয়ের কুরির সঙ্গে মিলে পোলোনিয়াম এবং রেডিয়াম আবিষ্কার করেন। রেডিয়াম অত্যন্ত শক্তিশালী তেজস্ক্রিয় পদার্থ যা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

তাঁর গবেষণার গুরুত্ব

  • তেজস্ক্রিয়তার প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম বৈশিষ্ট্য বোঝার ভিত্তি স্থাপন করেন।
  • তাঁর গবেষণা থেকে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার শুরু হয়।

নোবেল পুরস্কার

  1. ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার।
  2. ১৯১১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার।


মাদাম কুরির গবেষণা থেকে আমরা তেজস্ক্রিয়তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার শিখেছি। চিকিৎসা, শক্তি, এবং প্রযুক্তিতে তাঁর অবদান অপরিসীম।


তেজস্ক্রিয়তার ২০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • তেজস্ক্রিয়তা প্রথম আবিষ্কার করেন অঁরি বেকেরেল
  • মাদাম কুরি এবং পিয়ের কুরি রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম আবিষ্কার করেন।
  • তেজস্ক্রিয় পদার্থের SI একক হলো বেকেরেল (Bq)
  • তেজস্ক্রিয়তার একক কুরি (Curie) মাদাম কুরির নামে রাখা হয়েছে।
  • কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে কার্বন-১৪ ব্যবহৃত হয়।
  • ইউরেনিয়াম-২৩৫ পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
  • গামা রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিপজ্জনক।
  • তেজস্ক্রিয়তার ক্ষয়ের সময়কে বলা হয় অর্ধজীবন (Half-life)
  • প্লুটোনিয়াম-২৩৯ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণ স্বতঃস্ফূর্ত এবং নিয়ন্ত্রিত।
  • তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • আলফা কণার ভেদক্ষমতা কম হলেও এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক।
  • কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন আইরিন কুরি এবং ফ্রেডেরিক জোলিও কুরি
  • রেডিয়াম-২২৬ একটি গুরুত্বপূর্ণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ।
  • তেজস্ক্রিয়তার ক্ষয় একটি পরিসংখ্যানগত প্রক্রিয়া
  • প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো ইউরেনিয়াম
  • তেজস্ক্রিয়তার প্রথম গবেষণা হয় ফটোগ্রাফিক প্লেটে
  • তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ কণা হলো আলফা, বিটা, এবং গামা
  • ইউরেনিয়াম-২৩৮ পারমাণবিক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • তেজস্ক্রিয়তা চিকিৎসা, গবেষণা এবং শক্তি উৎপাদনে অপরিহার্য।

উপসংহার

তেজস্ক্রিয়তা বিজ্ঞানের একটি অনন্য উপহার, যা মানবসভ্যতার উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছে। মাদাম কুরি এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের অবদানের জন্যই আজ আমরা তেজস্ক্রিয়তার এই জ্ঞানকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। স্টাডিটেক ব্লগে এই তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনা তোমার কাজে লাগবে বলে আশা করি। পোস্টটি যদি তোমার জন্য উপকারী হয়, তবে এটি তোমার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো এবং আমাদের ফেসবুক পেজ লেখাপড়া  ফলো করতে ভুলো না।

ধন্যবাদ!



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies